Thumbnail image for the post: জন্মদিনঃ আমার লিপ-ইয়ার লিপি

জন্মদিনঃ আমার লিপ-ইয়ার লিপি

সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য জানি না, মরতে মরতে জন্মেছি লিপ-ইয়ারের লিপ-ডে'তে। চার-বছরে একটা করে জন্মদিন পাই। দূর্লভ সেই দিনগুলোর ভাল-মন্দ স্মৃতির গল্পগুলো নিয়ে আমার লিপ-ইয়ার লিপি।

সেদিন ভোররাতে, ঠিক ৪-টার সময় ফট করে আমি শেষমেশ জন্মেই গেলাম। ছেলে হয়েছে শুনে আম্মুর বিরক্ত মুখটা কেমন দেখতে হয়েছিল আচ করতে পারি। আব্বু নাকি তেমন হতাশ হননি। বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে মুখে মধু দেওয়া, আজান দেওয়ার পাশাপাশি নোটবুকে এক ফাঁকে তিনি লিখেও ফেললেন এই বিশেষ ঘটনার কথা।

আব্বুর নোটবুকে আমার জন্ম

নোট দেখেই বোঝা যাচ্ছে, বেচারা আব্বু সাহেব তারিখ নিয়ে বেশ ভালই তালগোল পাকিয়েছিলেন। কিন্তু আমি শিওর, গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের গোঁজামিলের চিপায় পড়ে তার ছেলেটা যে কিভাবে ফেঁসে গেল, তা তিনি তখনও তিনি বুঝে উঠতে পারেননি। বুঝতে আমারও সময় লেগেছে অনেক। এই ২০২০-এ এসে জীবনের ষষ্ঠ জন্মদিন পার করার পর যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমার অনুভূতি কি? আমি কিছুক্ষণ মাথা চুলকে, নাক খুঁটিয়ে হয়ত বলব, 'উমম...মেহ! 😏'

কারণ বুঝতে হলে আমাদেরকে পেছনে ফিরে যেতে হবে আবার।

আমাদের ফ্যামিলি কালচারে জন্মদিন মনে রাখা, পালন করা, হৈ-হুল্লোড় করা ব্যাপারগুলো একেবারেই নেই। একেবারে, দুয়েবারে বা তিনেবারে, কোনবারেই নেই। ছোটবেলা থেকে এই কনসেপ্ট টাই আমাদের ছিল না যে জন্মদিন একটা বিশেষ ব্যাপার, যেটাকে আলাদা ভাবে দেখা যেতে পারে। স্কুলে যাবার আগ পর্যন্ত জানতাম গরু-ছাগল, কবুতর, বিড়াল, কুকুর — এসবই শুধু লালন-পালন করা যায়। যাবার পরে অন্যদের দেখে জানতে পারলাম, জান্মদিন নামের জিনিসটাও নাকি পালন করা যায়!

এসব কারণেরই হয়ত জন্মদিনের ব্যাপারে বিশেষ কোন অনুভূতি আমার কাজ করেনি কখনো। কাজ করেনা অন্য সব দিবস বা বিশেষ দিনের ব্যাপারেও। আমার মনে হতে থাকে, এসব তো আর পাঁচটা সাধারণ দিন'ই! আমরাই রং-চং মাখিয়ে অন্যভাবে দিনগুলোকে দেখার চেষ্টা করছি মাত্র। কিন্তু তাই বলে যে ব্যাপারগুলো একেবারেই আমাকে নাড়ায়-চাড়ায় না, তা বললেও মিথ্যে বলা হবে। অন্যদেরকে যদি নাড়ায় কালবৈশাখীর মত, আমাকে হয়ত নাড়ায় শরতের ঝিরিঝিরি বাতাসের মত। তবু সে নাড়ানোও তো নাড়ানো!

প্রতিটি জন্মদিনে হয়না হয়না করেও অনেক কিছুই হয়েছে। পেছনে ঘুরে টুকরো টুকরো সেসব স্মৃতি গুলো চেখে দেখতে গেলে মিষ্টিই লাগে বেশ। সেসবের কয়েকটি টুকরো তোমার সাথে শেয়ার করা এবং তুলে রাখাই এই লেখার উদ্দেশ্য। শুরু করা যাক, চলো।

প্রথম জন্মদিন - ২০০০

যদিও অন্য সবার মত ১ বছর বয়সে না হয়ে আমার প্রথম জন্মদিন এসেছিল ৪ বছর বয়সে, তারপরেও সেদিনের ব্যাপারে কোন রকম কোন স্মৃতি আমার নেই। চলো ধরে নেই সেদিন ছিল রোদ ঝলমলে একটি দিন, যার অনেকটা কেটেছে জিকা গাছের আঠা দিয়ে ফড়িং ধরার ফন্দি করে, খানিকটা কেটেছে বিকেল বেলা পাড়ার ছেলেদের সাথে ধুলোবালি মেখে কাচের বল খেলে। আরো ধরে নেই, রাতে অত্যাধিক চিনি দিয়ে দুধভাত খেয়ে আমি সেদিন পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষদের তালিকায় ষষ্ঠ হয়েছি।

তবে এই সুযোগে গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের উপর আরেকটু রাগ না ঝেড়ে পারছি না। লিপ-ডে তে জন্ম নেওয়া আমার মত অভাগাদেরকে এই ক্যালেন্ডার যে শুধু চার বছরে মাত্র একটি জন্মদিন দিয়েই শাস্তি দেয়, তা কিন্তু নয়! শত-বর্ষীয় বছরগুলো (১৯০০, ২০০০, ২১০০ ইত্যাদি) ৪ দিয়ে বিভাজ্য না হলে সেসবের বছরেও কোন জন্মদিন নেই আমাদের! অর্থাৎ, প্রতিটি শত-বর্ষীয় বছর লিপ-ইয়ার হওয়া সত্ত্বেও সেসবের বেশির ভাগ বছরেই আমরা জন্মদিন পাব না। কি নিষ্ঠুর! কপাল বড্ড ভাল বলেই হয়ত ২০০০ সালের কাছাকাছি জন্মেছিলাম, জন্মদিন পেয়েছি। কপাল আরো ভাল হয়ে যদি আমি ২১০০ সাল পর্যন্ত বেচে থাকি, তাহলে দুঃখের ব্যাপার, সেবছর আমি জন্মদিন পাবো না। কেননা ২০০০ সাল ৪ দ্বারা বিভ্যাজ্য হলেও ২১০০ তা নয়।

দ্বিতীয় জন্মদিন - ২০০৪

আমার স্মৃতিতে সবচেয়ে রঙিন আমার ২০০৪ এর জন্মদিন। জীবনের দ্বিতীয় বার্থডে, বয়স হচ্ছিল ৮। আম্মু সম্ভবত মামা বাড়ি বা কোথাও ছিল। আসবার কথা ছিল কয়েকদিন পরে। বিকালের দিকে হটাৎ দেখি সে বারান্দা দিয়ে ঘরে ঢুকছে। অবাক হয়ে জানতে চাইলাম আগে আগে সে কিভাবে এলো, আম্মু বলল, আমার জন্মদিন বলেই নাকি সে আগে চলে এসছে! আমার জন্যে -- ভাবতেই সুন্দর লাগে না? সেখানেই থেমে থাকল না ব্যাপারটা। মেজো ভাইয়াকে আদেশ করা হল বাজার থেকে আইসক্রিম কিনে নিয়ে আসতে। ভাইয়া সাথেসাথে গিয়ে বিশাল ধামড়া একটা আইসক্রিমের বক্স নিয়ে আসল।

ঘটনার ব্যাপকতা বোঝাতে কিছু বাড়তি তথ্য দেওয়া এখানে জরুরি। আমি বড় হয়েছি ছোট-ছোট কাঠির আইসক্রিম খেয়ে। ভ্যানে করে ঘণ্টা বাজাতে-বাজাতে গ্রামে আইসক্রিম'ওয়ালারা আসতো। তাদের কাছ থেকে চার'আনা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা, আর আট'আনা দিয়ে দুধ মালাই কিনে খেতে খেতে ইঁদুর মামাদের হাতে বেশির ভাগ দাঁত'ই প্রায় খুইয়ে ফেলেছিলাম আমি। দুই টাকার কুলফি তখন একটা স্বপ্নের ব্যাপার ছিল। আর চকবার হলেতো সেটা দিয়ে আমাকে কিনে ফেলা যেত অন্তত ২৯২ বার। কাজেই, বক্সের আইসক্রিম দেখে সেদিন আমি যে ঠিক কতখানি খুশি হয়েছিলাম, সেটা পরিমাপ করার সূত্র আবিষ্কার হবে না কোনদিনও।

সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক রকম আনন্দ হয়েছিল সেবার। নিজেকে 'স্পেশাল' ফিল করা, সবাই মিলে সেই আইসক্রিম খাওয়া — বীভৎস সুন্দর কিছু স্মৃতি। হয়ত কিছুটা আবছা বলেই স্মৃতিগুলোকে দূর থেকে অনেক বেশি মায়াবী লাগে।

তৃতীয় জন্মদিন - ২০০৮

তৃতীয় জন্মদিনের স্মৃতি খানিকটা...উইয়ার্ড। আমাদের বাড়িতে এক বিরাটাকায় মোরগ ছিল তখন। চেহারা-সুতর অনেকটা বলিউডের সালমান খানের মত। পাড়ার মুরগিরা আমাদের সেই মোরগ বলতে পাগল। মোরগকে দেখলে তারা কয়েকটা হার্টবিট মিস করে ফেলত। তো, আমি আমাদের ঐ মোরগ সাহেবকে প্রায়ই দেখতাম অনেক মুরগির সাথে অতি অশোভন আচরণ(!) করতে। ছোট ছিলাম, জীব বিজ্ঞানের জটিল সূত্র তখনো মাথায় ঢুকেনি, ভাবলাম অসহায় এই মুরগিদের পাশে আমার দাঁড়ানো উচিৎ। কয়েকদিন বাধা দিলাম মোরগের কর্মকান্ডে। কয়েকটা মুরগিকে বাঁচিয়ে আনলাম তার ভয়াল গ্রাস থেকে। এতে করে মুরগি আপুরা খুশি হয়েছিল কিনা জানি না, কিন্তু মোরগ সাহেব চরম ক্ষিপ্ত হলেন আমার উপর। শুরু করলেন আমাকে আক্রমণ করা। যেখানেই পায়, ঈগলের মত উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে। নখ দিয়ে আঁচড়ে রক্ত বের করে দেয়। ঘর থেকে বের হওয়াই রীতিমত কঠিন হয়ে গেল আমার!

কিছুদিন এটা নিয়ে সবাই হাসাহাসি করল খুব। এরই মধ্যে একদিন মোরগ সাহেব কোত্থেকে উড়ে এসে কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমার চোখের ঠিক নিচ থেকে খানিকটা মাংস উঠিয়ে নিয়ে চলে গেলেন। হাসি বন্ধ করে এবার সবাই নড়েচড়ে বসল। আমার ক্ষত দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে আর সামান্য কিছুটা হলে চোখই হারাতাম।

সেই সপ্তাহেই একটা ২৯শে ফেব্রুয়ারি ছিল। সিদ্ধান্ত হল মোরগটা আমাকে উৎসর্গ করা হবে। জন্মদিনের দুপুরে মোরগের বিশাল সাইজ রান আমাকে খেতে দেওয়া হল। খেতে খেতে চিন্তা করছিলাম ব্যাপারটাকে আমার গিফট হিসাবে দেখা উচিৎ, নাকি প্রতিশোধ হিসাবে।

চতুর্থ জন্মদিন - ২০১২

চতুর্থ জন্মদিন কেটেছে চাচার বাসায়। সেখানকার পরিবেশ আমার বাসার থেকেও খানিকটা সিরিয়াস ধাঁচের। জন্মদিন পালন তো দূরের কথা, ভাবাও একরকম অন্যায়। তবে খুব কাছের দুজন বন্ধু ছিল সেখানে। তিনজনে মিলে বিকালে আমরা গিয়েছিলাম পদ্মার চরে। চর ভর্তি বালি। সেগুলোকে স্নো ধরে নিয়ে অদ্ভুত এক ছোড়াছুড়ির খেলা খেলেছিলাম আমরা। মনে পড়লে এখনো দ্বিধায় পড়ে যাই, বয়স তো একেবারে কমও হয়নি তখন, হয়েছিল'টা কি আমাদের? 🤔

Me blowing sand on myself, no idea why 😬

সেখানেই শেষ নয়, কাছের ঐ বন্ধুদের মধ্যে একজনের নাম চলো ধরে নেই জার্মান। রাতে বাসায় ফিরে দেখা গেল জার্মান আমার জন্যে গিফট রেখেছে। গিফট কি ছিল মনে নেই। তবে গিফট এর উপরে একটা চিরকুট ছিল। চিরকুট টা হাতে নেবার সময় জার্মানের মধ্যে চরম উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা গেল। শব্দ করে পড়তে বলল আমাকে। পড়লাম, 'MOM'। জার্মান বেলুনের মত চুপসে গেল। কিছুই বুঝলাম না আমি। জিজ্ঞেস করলাম, MOM মানে কি? ও যা বর্ননা করল, তার অর্থ অনেকটা এরকমঃ

ও চাচ্ছিল আমাকে এমন কিছু দিতে, যা দেখে আমি চরম অবাক হয়ে যাব। এতটাই অবাক হব, যে, মুখ দিয়ে বলব, WOW!!। কিন্তু সেরকম কোন কিছুই ভেবে বের করতে না পেরে শেষমেশ তুখোড় এক বুদ্ধি বের করল সে। ঠিক করল একটা কাগজে লিখবে WOW এবং সেটা আমাকে দিয়ে পড়াবে। আমি পড়তে গিয়ে WOW বলব। এরপরে বাকি জীবন আমাকে শোনাবে যে, ও আমাকে এমন একটা গিফট দিয়েছিল, যেটা দেখে আমি WOW হয়ে গিয়েছিলাম। খ্যাঁক-খ্যাঁক করে হাসবে মানুষের কাছে আমাকে বোকা বানানোর এই গল্প বলে।

কিন্তু ভাগ্যরাণী সেদিন আমার হাতটাই ধরেছিলেন। চিরকুটটা আমি উল্টো করে ধরেছিলাম কিছু না জেনেই। ফলশ্রুতিতে, জার্মানের WOW আমার চোখে MOM হয়ে গিয়েছিল। ওর বদলে আমিই এখন ওর বোকা হবার গল্প বলে খ্যাঁক-খ্যাঁক করে হাসি। হাসব বাকি জীবন।

পঞ্চম জন্মদিন - ২০১৬

পঞ্চম জন্মদিনে তে আমি ঢাকায়। ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি মাত্র। ব্যাচের অনেকের জন্মদিন ছিল প্রথম কয়েক মাসেই। প্রায় সবার বার্থডে'ই আমরা পালন করলাম বেশ ঘটা করেই। এক সময় আমার বার্থডে এলো। কয়েক বন্ধুকে মনে হল বেশ এক্সাইটেড। ডিম নিয়ে রেডি আমার ভবলীলা সাঙ্গ করার জন্যে। জন্মদিনের ভোরে আমি ঠিক করলাম ভার্সিটিতে যাবো না। ভাবলাম, আমার বদলে ওরাই বরং সারপ্রাইজড হোক। বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ালাম অনেকক্ষণ। বিকেল আর সন্ধ্যে কাটালাম রমনা পার্কের দুটো কুকুরের সাথে।

রাতে বাসায় ফিরে দেখি ভাইয়া-ভাবি আমার জন্যে কেকের বক্স নিয়ে অপেক্ষা করছে। কুড়িতে পৌঁছে আমার জীবনের প্রথম বার্থডে কেক। বক্স খোলা হল। সাদা রং এর একটা সুন্দর কেকে হলুদ ক্রিমে লেখা "Happy Birthday", এর নিচে খানিকটা অংশ নেই। ভাইয়া-ভাবি অবাক হয়ে চোখ চাওয়া-চাইয়ি করতে লাগল। বুঝতে কিছুটা সময় লাগল, তবে বোঝা গেল রিকশায় করে আনার সময় আমার নাম লেখা অংশটুকু ভেঙে গেছে। আমার হয়েও যেন আমার হলোনা কেকটা। ভাগ্যদেবী সেবার হয়ত আর শক্ত করে ধরেননি আমার হাতটা। 🙂

আমার না হতে চাওয়া কেক

পরের দিন কুরিয়্যারে এক ছোট বোনের গিফট পেলাম। ধরা যাক এই ছোট বোনের নাম বাজে। বাজে হচ্ছে সেইসব মানুষদের একজন যাদের গিফট এর ধরন দেখলে, গিফট এর পেছনে ব্যয় করা সময় এবং শ্রমের কথা চিন্তা করলে সেই গিফট এর জন্যে তোমার নিজেকে অযোগ্য মনে হবে, তুমি এক ধরনের অপরাধ বোধে ভুগতে শুরু করবে। ব্যাপারটা খুবই বাজে। তবে সম্ভবত খুব ভাগ্যবান হতে হয় এমন বাজে গিফট পেতে হলে।

বাজে'র গিফট এর একাংশ

ষষ্ঠ জন্মদিন - ২০২০

বাড়িতে মুভ করেছি অল্প কিছুদিন হল। কিছু কাজে ঢাকায় গিয়েছিলাম, ফেরার কথা ২৯ তারিখে। ২৮ তারিখে এক কাণ্ড হল। ফোনে চার্জ ছিল না। ফোন চার্জে দিয়ে বরাবরের মতই সেদিনও আমি খুব সকাল-সকাল ঘুমিয়েছি। সকাল-সকাল ভোর ৫টা-৬টা আরকি। ঘুম ভেঙে দেখি ফোন বন্ধ হয়ে আছে। টেবিল থেকে হাত ঘড়ি টেনে নিয়ে দেখা গেল সময় তখন ৩টা ৩৪। আকাশ থেকে না পড়লেও খাট থেকে পড়লাম। ফোন রহস্য উৎঘাটন করা গেল। চার্জে দিলেও, সুইচ দিতে ভূলে গেছি। এলার্ম ও বাজেনি সেকারণেই। যাই হোক, ফোন অন করে একগাদা মিসড-কল আর একটা টেক্সট পাওয়া গেল। এক বন্ধুর টেক্সট, লিখেছে, 'eta khub kharap korli'। মিসড কলের লিস্ট দেখে মনে হল ফ্যামিলির কেউই ফোন দিতে বাকি রাখেনি। এমনিতে আমার ফোনে মাসে গড়ে আড়াইটা কল আসে। কিন্তু কোন এক্সিডেন্টাল কারণে ফোন বন্ধ হয়ে গেলে কিভাবে যেন সবাই খবর পেয়ে যায়, একসাথে কল দিতে থাকে।

সবার সাথে যোগাযোগ করে জানা গেল, নষ্টের মুল আসলে বন্ধুরাই। আমার কতিপয় বন্ধু আমাকে সারপ্রাইজ দিতে বেলা ১২ টার দিকে নাকি ধানমন্ডি এসেছে উত্তরা থেকে। আমাকে ফোনে না পেয়ে একসময় তারা ফোন করেছে আমার বাসায়। আমার বাসার সবাই-ও আমাকে না পেয়ে পড়ে গেছে মহা টেনশনে। তারা সবাই আবার ফোন করেছে ফ্যামিলির অন্যদের। অন্যরা আবার ফোন করেছে আমাকে। আর ওদিকে ফোনের এই দুষ্ট-চক্র শুরু করে দিয়ে বিকেলের দিকে উত্তরার ফিরতি পথ ধরেছে আমার বন্ধুরা। বাসার সবাইকে জানালাম আমি বেচে আছি। এই সংবাদে কাউকেই বিশেষ আনন্দিত মনে হল না। সবাই বরং রাগারাগিই করল। বন্ধুদেরকেও আটকানো গেল। গেলাম ওদের সাথে দেখা করতে।

বন্ধুরা কেক, বেলুন, মোমবাতি ইত্যাদি নিয়ে এসছে আমার জন্যে। পড়ন্ত বিকেলে ধানমন্ডি লেকের প্রবীণ এক গাছের নিচে আমরা কেক কাটলাম। দুঃখের ব্যাপার, কেকে বন্ধুরা আমার নাম লিখেনি। স্বভাবজাত ভাবেই, কাউকে বলতে চাইব না, এমন কিছু একটা লিখে রেখেছে। নাম লেখা কেক আমার পাওয়া হলনা এবারও। তবে যেটা পাওয়া হল, সেটা হচ্ছে মোমবাতি। জীবনের ষষ্ঠ জন্মদিনে এসে ৬ লেখা কিউট একটা মোমবাতি নিভিয়েছি আমি। কি সুন্দর না?

আমি এবং কতিপয় বন্ধু। বাকি দুই বন্ধুর পরিষ্কার কোন ছবি পাওয়া যায়নি।

রাতে খুবই আন-এক্সপেক্টেড দুটো কল পেলাম। রাত ১২টা ০১ মিনিটে কল করল আমার মেজো ভাইয়া। একটু পরে কল করল এক বড় ভাবী। পরের দিন সকালে কল পেলাম আমার চাচা-চাচীর কাছ থেকে। চতুর্থ জন্মদিন যেখানে কেটেছিল, সেই চাচা-চাচী। জন্মদিনের ব্যাপারে আমাদের পারিবারিক কালচারের যে বর্ননা দিয়েছি, তা চিন্তা করলে হয়ত আন্দাজ করতে পারবে এই কলগুলো আমার জন্য কতটা অপ্রাত্যাশিত, কতটা স্পেশাল।

বাজে তার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারো আমাকে বিব্রত করেছে। একগাদা রান্না-বান্না করেছে, বাসায় গিয়ে সেসব নিয়ে আসতে বাধ্য করেছে। সেইসব খাবার ঢাকা থেকে বাড়িতে নিয়ে এসে সবাই মিলে খেয়ে আমি ধন্য হয়েছি।

সব মিলিয়ে, এবারের জন্মদিনে যা যা পেয়েছি, তা আমার চাওয়ার লিস্ট'কে লজ্জায় ফেলে দিয়েছে।


বয়স মাত্র ৬ হল, এটা ভাবতে মন্দ লাগে না। সবার প্রতি বছরে ১ বছর করে বয়স বাড়লেও আমার ১ বছর বাড়ছে ৪ বছরে। আমি ভেবেছিলাম এই হিসাবেই আমি বয়স গুনব। কিন্তু তাতে জটিল একটা সমস্যা পাওয়া গিয়েছে। হিসাব করে দেখেছি, এভাবে বয়স গুনলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমার বিয়ের করার বৈধ বয়য়স (২১) হবে ২০৮০ সালে। 😐

তবে জন্মদিনের টুকরো এইসব ঘটনা আমার খুব অদ্ভুত লাগে। যখন হটাৎ হটাৎ অনুভব হয় যে কিছু মানুষ সত্যিই তোমার জন্য কেয়ার করে, তোমার ভালমন্দে তাদের আসলেই কিছু আসে যায়, বা তারা সত্যি-সত্যি চায় তুমি ভাল থাকো — তখন কিভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়? কিভাবে বোঝাতে হয় তাদের কথা ভেবেই তোমার বুক ফুলিয়ে বাঁচতে সাহস হয় বা দাঁত কেলিয়ে হাসতে ইচ্ছে হয়? আমি জানি না। তুমি জানলে আমাকে জানিয়ে দিও প্লিজ।

বাহ! পুরোটা পড়ে ফেলেছেন! ধৈর্যের অসামান্য এই কৃতিত্বের পুরষ্কার হিসাবে আড়াইটা বিস্কুট পাওনা থাকল আপনার। কমেন্টের ব্যাবস্থা এখানে নেই। সেসবের জন্য বিশাল সব সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম তো রয়েছেই! তাছাড়া শেয়ার করলে নাকি আনন্দও বাড়ে! 😉

পোষ্ট নিয়ে আপনার মতামত, কোন ভূল-ত্রুটি পেয়ে থাকলে বা কোন সাজেশন থাকলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, প্লিজ। :)